আলোচিত সিসা কারখানার মালিক-ম্যানেজ মাস্টার আ.লীগ নেতা মোশারফ গ্রেফতার জনমনে স্বস্তি…
ময়মনসিংহের চায়নামোড়ে অবস্থিত কালো ধোঁয়া ছড়ানো আলোচিত সিসা কারখানার মালিক আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৫ এপ্রিল ঘটে যাওয়া মারামারির মামলায় মোশাররফ গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে আছে, তবে শনিবার (৩ মে) ঘটনাটি জানাজানি হয়, এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে, বরাবরের মতো এখানো মোশারফের মালিকানাধীন আলোচিত সিসা কারখানাটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুত্র জানিয়েছে, মোশাররফ গত আওয়ামী সরকারের আমলে এলাকায় মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজী ও অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে, তার দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ, সম্প্রতি সে গ্রেফতার হয়েছে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে এবং অনেকেই প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
সুত্র আরও জানিয়েছে, মোশারফ ফসলি জমিতে ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সিসা কারখানা পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের বছরে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা মাসোহারা দিতো, কোন সাংবাদিক যেন রিপোর্ট না করে সেজন্য সাংবাদিকদেরকে ৫০ লাখ থেকে শুরু করে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছে মোশারফ, মোশারফের করা গোপন তালিকা সুত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
পরিবেশ বিঘ্নকারী এই প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সিলগালা করা হলেও রহস্যজনকভাবে এখনো চলমান রয়েছে, সিসা কারখানার দুষিত দোয়ায় জনজীবন চরম দুর্বিষহ এবং চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকলেও এই সিসা কারখানার মালিক স্থানীয় ক্ষমতাশীল দলের প্রভাবশালী লোক হওয়ায় এলাকাবাসী এদের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি, এই কারখানায় নষ্ট ও বাতিল ব্যাটারি, ফেলে দেয়া বিভিন্ন ড্রিংকসের ক্যান এবং পুরোনো লোহার বর্জ্য এনে দেদারসে গলানো হয়, বর্জ্য গলানোর সময় এর ক্ষতিকারক ধোঁয়ায় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম আচ্ছাদিত হয়ে যায়, এতে শিশুসহ সাধারণ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এছাড়া দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল এবং বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পাশাপাশি এখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে, শুধু তাই-ই নয়, সিসা কারখানার আশপাশে জন্মানো ঘাস খেয়ে হুমকির মুখে পড়েছে পশুপাখিও, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর চলে আসছে মোশারফের এই কারখানা, কারখানাটির সামনে কোন ন্যূনতম সাইনবোর্ডও, দিনে কর্মযজ্ঞ বন্ধ রেখে সন্ধ্যা থেকে সারারাত চলে কারখানাটি, সুযোগ বুঝে মাঝেমধ্যে বিকেলেও চালু রাখা হয়, এসময় গিজগিজে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায়, দরজা-জানলা দিয়ে ধোঁয়া প্রবেশ করে বাসাবাড়িতেও, এমতাবস্থায় মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না ছেলে-মেয়েরা, তবুও নির্বিকার পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসন!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানায়, গরিব মানুষ বলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও তাদের এই কারখানায় কাজ করে খেতে হচ্ছে, অন্য কোথাও কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই কাজ করতে হবে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মোশারফকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেনি, তিনি গ্রেফতার আছে কি না আমার জানা নেই, তবে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মোশারফকে কারাগারে পাঠানো হয়, এখনো সে কারাগারে রয়েছে।